সুগার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও মুক্তির সঠিক উপায় » Sugar diabetes theke niyontroner upay

Home » Health Tips » সুগার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও মুক্তির সঠিক উপায় » Sugar diabetes theke niyontroner upay

সুগার কন্ট্রোল করার জন্য আমরা অনেক কিছু পন্থা অবলম্বন করে থাকি।  যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে তাদের অনেক কিছু নীয়মকানুন মেনে চলতে হয়, এই খাওয়া যাবেনা এটা পরিমাণ মতো খেতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।বর্তমান পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের রোগের মধ্যে একটি অন্যতম রোগ হলো ডায়েবেটিস।  আর এই ডায়েবেটিসের মাত্রা দিন দিন ব্যাপক হারে বেড়েই চলেছে, যা অনেক সময় আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।  আর যার প্রভাব স্বাস্থ্যের উপর এসে পড়ে, শুরু হয় নিয়মে বাঁধা জীবন যাপন।

সুগার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও মুক্তির সঠিক উপায়

কোনো ব্যাক্তি ডায়েবেটিসের স্বীকার হয়ে পরেলে তাকে নানা রকমের নিয়ম মেনে চলতে হয় বিশেষ করে খাওয়া দাওয়ার বিষয় নিয়ে সদাসতর্ক থাকতে হয়।  এবং এর থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য শুধু খাওয়া দাওয়ার উপর এবং মেডিসিনের উপর নির্ভরশীল হলেই হবেনা দৈনন্দিন জীবনে কিছু বাড়তি পরিবর্তন আনলে তবেই সঠিক সুফল মিলবে। আজ কিছু খাবার তালিকা তৈরি করবো যেগুলি নিয়মিত ও পরিমিত সেবন করলে ডায়েবেটিস ও সুগার থেকে মুক্তির সঠিক পথ মিলবে।

⦿ সুগার ও ডায়েবেটিস থেকে মুক্তির সঠিক উপায় ⦿

 নাশপাতি (Pears) : নাশপাতি সুগার কন্ট্রোল করতে খুব উপকারী একটি ফল।  একটি পরিপূর্ণ নাশপাতি ফলে ৬ গ্রাম ফাইবার ১০০ গ্রাম ক্যালোরি ২৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে।  নাশপাতির মধ্যে থাকা এই কার্বোহাইড্রেট আর ফাইবারের কম্বিনেশন শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। ফলে শরীরে ব্লাড সুগারের সমতা বজায় থাকে।  একজন ব্লাড সুগার ব্যক্তি একটি পুরিপূর্ণ নাশপাতি সেবন করে মিষ্টি খাবার সখ পূরণ করতে পারেন।

 কমলা লেবু (Orange lemon) : লেবু তার মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক মিষ্টি, মানুষকে সুস্বাস্থ প্রদান এবং সুগার রুগীদের জন্য একটি অন্যতম প্রাকৃতিক ফল।  কমলা লেবুর মধ্যে ক্যালরি কম এবং ফাইভার বেশি থাকে।  এছাড়াও ভিটামিন C , ফলিক আর পটাসিয়াম পাওয়া যায়।  কমলা লেবুতে ফাইভার আর পলিফেনল বেশি থাকার কারণে ব্লাড সুগারের মাত্রা ঠিক থাকে।  এই জন্য সুগার রুগীদের প্রয়োজন প্রতিদিন খাবার তালিকায় একটি করে কমলা লেবু রাখা।

◉ স্ট্রবেরি (Stwberry) : স্ট্রবেরি সুগার প্রেসেন্ট ব্যক্তি দের জন্য একটি অন্যতম উপকারী ফল বলা যেতে পারে। রিসার্চ থেকে জানা গেছে এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে দিনে ২ থেকে ৩ স্ট্রবেরি সেবন করলে টাইপ-টু সুগার বারার সম্ভবা কম হয়। স্ট্রবেরিতে ভিটামিন-C, এবং ফাইভার এর মাত্রা বেশি এবং কার্বোহাইড্রেট এর মাত্রা কম থাকে। এই কারণেই স্ট্রবেরি নিয়মিত খেলে ব্লাড সুগারের মাত্রা মেনটেইন থাকে, আর এনার্জি লেবেল বৃদ্ধি পায়।

◉ কিউই ফল (Kiwi Fruit 🥝) : কিউই ফলে ভিটামিন এবং মিনারেল বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।  যা সুগার রোগের উপাচার হিসাবে দারুণ ভাবে উপকারী একটি ফল।  এই ফল ভিটামিন-A, ভিটামিন-C, ভিটামিন-E, ফাইভার আর পটাসিয়াম এ ভরপুর হয়। এই ফলে কার্বোহাইড্রেট এর মাত্রা থাকে অল্প পরিমাণে।  আর ফাইবারের মাত্রা বেশি পরিমাণে থাকে যার ফলে কোলেস্টরল লেভেল কে মেনটেইন রাখে এবং রক্তে সুগারের পরিমাণ তার সমতা বজায় রাখে।  দিনে একটি কিউই ফল খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিক থাকবে এবং শরীর তার এনার্জি ধরে রাখতে সক্ষম হবে।

◉ গ্রেপ ফ্রুট (Grape Fruit) :  ব্লাড সুগার কম করতে এবং শরীরের বাড়তি ফ্যাট অপসারণ করতে গ্রেপ ফ্রুট খুব উপকারী।  গ্রেপ ফ্রুটে ভিটামিন A , ভিটামিন C আর ফাইভার এ ভরপুর থাকে।  Grape Fruit শরীরের ক্যালোরির মাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করে।  প্রতিদিন অন্তত একটি গ্রেপ ফ্রুট খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিক থাকবে।

◉ পেয়ারা (Guava) : পেয়াড়া এবং পেয়ারার পাতার চা দুটোই সুগার কন্ট্রোল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  পেয়াড়ার মধ্যে ফাইভার, ল্যাকপিন, পটাসিয়াম, ভিটামিন C, ভিটামিন A, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এর মত মিনারেলসে ভরপুর থাকে।  স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে যদি প্রতিদিন একটি পেয়ারাকে ছাল ছাড়িয়ে সেবন করা যায়, তাহলে ব্লাড প্রেসার কে কন্ট্রোলে নিয়ে আসা সম্ভব।  ভাত খাবার পর এক কাপ পেয়রা পাতার রস নিকরে নিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে করে আরও ভালো ফলাফল মিলবে এবং শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা সঠিক থাকবে।

◉ জাম (Black Plum) : সুগার প্রেসেন্ট দের জন্য জামের উপকারী গুণাবলী অতুলনীয়। শুধু জাম ফল না এই জামের বিজ, ছাল এবং পাতাও সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।  জাম শরীরে ফ্যাট এবং ব্লাড সুগার কে নিয়ন্ত্রন করতে খুব কার্যকর একটি ঔষধের ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও জাম ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ, জলের পিপাসা প্রভৃতি ব্যাধি গুলিকেও নিরাময় করতে পারে।

◉ আপেল (Apple) : আঁশযুক্ত আপেল খেলে সুগার কন্ট্রোলে থাকে। আপেল ফাইভার, ভিটামিন C, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর থাকে।  আপেলে থাকা ফাইবার ও কার্বোহাইড্রেট হজম করতে সাহায্য করে।  যার ফলে সুগার লেবেল কন্ট্রোল থাকে।  প্রতিদিন এক থেকে দু টুকরো আপেল কাটা সুগার প্রেশেন্টরা খেতে পারেন। 

◉ দারচিনি (Cinnamon) : দারচিনি রান্নার তরী তরকারীর কাজে খাবারকে সুস্বাদু করার জন্য সাধারণত ব্যাবহৃত হয়ে থাকে।  যদিও এটি স্বাদে মিষ্টি তবু সুগারের সমতা বজায় রাখতে এটি খুব কার্যকারী।  এটি সেবন করলে আমাদের শরীরের অবাঞ্ছিত কোলেস্টরল কম হয় এবং ইমিউনিটি সিস্টেমকে স্ট্রং করে যেটা টাইপ ১ ও টাইপ ২ দুই ধরনের ডায়াবেটিসের জন্য অনেক বেশি কার্যকরী।  সকালে খাবার পর এবং সন্ধ্যায় যে কোনো এক সময় ৫-১০ গ্রাম দারচিনি পাউডার পরিমাণ মত হাল্কা গরম জলে মিশিয়ে সেবন করা যেতে পারে।

◉ আমলকি (Emblica Fficinalis) : আমলকি একটি সুপার ফ্রুট নামে পরিচিত। আমলকির মধ্যে ক্রোমিয়াম নামক মিনারেল পাওয়া যায়।  যা আমাদের শরীরের কার্বোহাইড্রেট মেটাবোলিজম কে বুস্ট করে আর ইনসুলিন তৈরী করেতে সাহায্য করে।  রোজ খালি পেটে জল খাওয়ার আধা ঘন্টা পর ২০ থেকে ৩০ মিলিগ্রাম আমলকি জুসে দু চিমটি হলুদ মিশিয়ে খাওয়া খেতে পারেন।  নিয়মিত এটি করলে মাত্র সাত দিনের মধ্যেই ফল বুঝতে পরা যাবে।  এটি করলে শরীরের বেড়ে হওয়া ব্লাড সুগার খুব দ্রুত কমতে থাকে।

◉ কারি পাতা বা মিঠা নিম : মিঠা নিমের পাতায় এমনই ওষধি গুণ পাওয়া যায় যে এটি ব্যাবহার ফলে অনেক ধরনের কঠিন ও গম্ভীর রোগের অদ্ভুত পরিণাম পাওয়া যায়।  সিয়েন্টিস ও হেল্থ বিশেষজ্ঞরা এটা মনে করেন যে করি পাতার মধ্যে এমন কিছু গুণ আছে যা শরীরের সুগারের মাত্রা বৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা করে এবং এর সাথে লাং ক্যান্সার ও মহিলাদের রিপ্রোডেক্টিভ সিস্টেমের সাথে যুক্ত বিভিন্ন সমস্যাকে সফলতার সাথে নিরাময় করতে সক্ষম।

এটা উপয়োগ করার জন্য যেটা করতে হবে টা হলো।  আট থেকে দশ টি করি পাতা কে ভালো করে পিষে নিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে।  এরপর একগ্লাস জলে পেস্টটি মিশিয়ে নিয়ে একটি পরিষ্কার পাত্রে ঢেলে নিয়ে গরম করতে হবে, ততক্ষণ গরম করুন যতক্ষণ প্রযন্ত না জল অর্ধেক হয়।  এর পর এটি নামিয়ে নিয়ে ছেকে নিয়ে অল্প গরম অবস্থায় সেবন করুন।  এটি সপ্তাহে তিন বার দিনে খাবার পর বা রাতে খাবার পরও করা যেতে পারে।  আরও ভালো পরিণাম পাওয়ার জন্য এর মধ্যে এক চিমটি দারচিনি গুরো এবং এক চিমটি হলুদ গুরো মিশিয়ে নিতে পারেন।


◉ অ্যালোভেরা ( Aloe Vera) : অ্যালোভেরা যেমন আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য উপযোগী তার থেকেও বেশি এটি আমাদের সুস্বাস্থ্যের ব্যপারে ভালো একটা উপকরণ।  বিভিন্ন স্টাডি থেকে জানা গেছে অ্যালোভেরা ব্যাবহারের ফলে ডায়েবেটিস এবং তার সাথে অনেক প্রকার রোগের উপসম করা সম্ভব যেমন উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure), গ্লুকোমা (Glocoma), আস্থমা (Asthma), আর পেটের বিভিন্ন সমস্যা (Stomachs Disease) ঠিক করা সম্ভব।
বিশেষ করে যে সমস্ত ব্যাক্তির ব্লাড সুগার ২০০ থেকে অধিক ওই সমস্ত ব্যাক্তিদের জন্য অ্যালোভেরা ভালো একটি উপাচার হিসাবে কাজ করে।  অ্যালোভেরা খালি পেটে সেবন করলে সবচেয়ে ভালো বলে মনে করা হয়। এই জন্য বেড়ে যাওয়া ব্লাড সুগার কন্ট্রোলে রাখার জন্য রোজ সকালে ২০ থেকে ৩০ মিলিগ্রাম অ্যালোভেরা জুস গরম জলে সাথে সেবন করা দরকার।

◉ আম পাতা (Mango Leaves) : আমপাতা আমাদের শরীরের গ্লাইকসেরেমিক সমতা ঠিক থাকে।  যেটি শরীরের চিনির মাত্রা কম করে ফলে ধীরে ধীরে শরীরের  গ্লুকোজের পরিমাণ কম করতে থাকে। আম পাতা ব্যাবহারের জন্য ৫ থেকে ৬ টি পাতা নিয়ে ভালো করে পিষে নিতে হবে, এরপর এক গ্লাস জলে সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে।  সকালে পাতা মিশ্রিত জলকে ভালো করে ছেঁকে নিয়ে খালি পেটে সেবন করতে হবে।  এই আমার পাতা মিশ্রিত ছাঁকা জল সেবন করলে শরীরের ইনসুলিনের মাত্রা বাড়াতে এবং সুগারের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

◉ জবা পাতা (Hibiscus Leaves) : জবা গাছের পাতা ডায়েবেটিস কমানোর জন্য খুব কার্যকারী একটি উপকরণ।  স্টাডি থেকে জানা গেছে জবা গাছের পাতা থেকে পাওয়া ফাইটোকেমিক্যাল শরীরের ইনসুলিন সেন্সিভিটি কে বাড়াতে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ অর্থাৎ সুগারের মাত্রা কমাতে ভীষণভাবে কার্যকারী।  এই পাতায় ফেলোটিক অ্যাসিড মাত্রা অধিক থাকে যা ডায়েবেটিস রোগীদের জন্য একটি মহাঔষধী হিসাবে কাজ করে।

এটি ব্যাবহার জন্য ৮ থেকে ১০ টি পাতা ভালো করে পিষে নিয়ে এক গ্লাস জলে সারা রাত্রি ভিজিয়ে নিতে হবে, এবং সকালে ভালো করে একটি পাত্রে ছেঁকে নিয়ে সকালে এবং সন্ধ্যায় দুই টাইম সেবন করতে হবে।  এছড়াও পাতা শুকনো করে পাউডার বানিয়েও সেবন করা যেতে পারে। কিন্তুু খেয়াল রাখতে হবে পাতা গুলি যাতে সূর্যের আলোতে শুঁকনো না হয়।

◉ কালোজিরা (Nigella Sativa) : কালোজিরাতে বিভিন্ন ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে।  যাদের টাইপ ১ এবং টাইপ ২ যেকোনো ধরনের সুগার আছে যদি কালোজিরা ডায়েটে সামিল করেন তবে ডায়েবেটিস ঠিক হবার সাথে সাথে শরীরে আরও অন্যান্য রোগের উপসম করা সম্ভব।  মধুমেহ রোগীদের জন্য কালোজিরা এমনই একটি মহাঔষধী যেটাকে অ্যান্টি ডায়েবেটিক মেডিসিনও বলা হয়। কালোজিরা খাবার পর চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে বা কালোজিরার পাউডার তৈরি করে জলে করে চায়ের মতো করে সেবন করা যেতে পারে।

➫ এই স্বাস্থ্য (সুগার ও ডায়াবেটিস) বিষয়ক পোস্টটি আপনার উপকারে আসলে অপরকেও শেয়ার করে সাহায্য করুন। সকলের সু-স্বাস্থ্য কামনা করি ধন্যবাদ।
Scroll to Top