একটি নতুন হৃদয়ছোঁয়া ভালোবাসার গল্প অন্তরাল – A new Heart Touching Love Story in bangla

Home » Bangla Love Story » একটি নতুন হৃদয়ছোঁয়া ভালোবাসার গল্প অন্তরাল – A new Heart Touching Love Story in bangla

আজ একটি হৃদয় ছোঁয়া ভালোবাসার কথা বলবো। যে ভালোবাসার শুরু অন্তরাল থেকে।  কিছু ভালোবাসা এমনও হয় যেখানে চোখের মিলন নাহলেও মনের মিলন হয়ে যায় প্রেমিক প্রেমিকার অজান্তে।  আজ এরকমই একটি ভালোবাসার গল্প ও কাহিনী আপনাদের কাছে বলতে চলেছি আশাকরি সকলের ভালো লাগবে।

হৃদয়ছোঁয়া গল্প অন্তরাল

একটি হৃদয়ছোঁয়া গল্প অন্তরাল - A Heart Touching Love Story in bangla
(Heart_touching_love_story in bangla)

 

মিশির যখন কলেজে ভর্তি হলো তখন সে বুঝতে পারলো যে সে প্রেমে পরেছে। আর এই প্রেম বড়ো অদ্ভুত ধরনের। যার কারণে মানুষ তার মন হারিয়ে ফেলে অজানা এক ভালো লাগতে। মিসির কলেজ থেকে আনন্দিত মনে বাড়ি ফিরলো, কলেজ তার আজ প্রথম দিন। সে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতে যাবে এমন সময় তার চোখে পরলো পুরো দেহ বোরখা বেষ্টিত একটি মেয়ে অটো রিক্সা থেকে নামছে। সে অটো রিক্সার চালককে টাকা দিচ্ছে। মিসির অটো থেকে এভাবে নামতে হাজার মেয়েকে দেখেছে, কিন্তুু এই মেয়েটি যার দেহ বোরখা বেষ্টিত আর যেটা লক্ষ্য পরে সেটা হলো শুধু হাতের কয়েকটি আঙ্গুল। মিসিরের হৃদয় ছুয়ে গেল ক্ষণিকের এই দৃষ্টি। মেয়েটি অটো চালককে টাকা মিটিয়ে মিসিরের পাশের বাড়িতে চলে গেলো। মিসির ভাবতে থাকলো এতক্ষন ধরে সে ভাবছিল কি! কি করে কোনো মেয়ের প্রতি তার দৃষ্টি এতক্ষন আটকে ছিল কি ভাবে!?


আসলে মিসির বাকি আর ছেলেদের মত না সে নিজেকে নিয়ে আর নিজের মনকে নিয়ে বেশি ভাবতে পছন্দ করে। বাকি কোনো কিছুতে সে বেশি আগ্রহী না। সকালে উঠে কলেজ যাওয়া সেখানে প্রফেসর দের লেকচার শোনা বাড়ি ফিরে খাওয়া দাওয়া এরপর কিছুক্ষন শুয়ে থাকা। আর তারপর নিজের পড়াশোনা।

কলেজে তো কতো মেয়ে যারা মিসিরের সহপাঠী। কোনোদিন তাদের সাথে তো কথা সে ভাবে বলেনি বা সে এরকম নজরে কারোর দিকে দৃষ্টি আকর্ষন করেনি। এরকম না যে সে অহংকারী বা নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করে। আসলে মিসির সবসময় তার পড়াশোনায় মশগুল থাকে। বাড়তি কোনো জিনিসের প্রতি দৃষ্টি অগোচর হতোনা সেভাবে।


কিন্তুু সে দিন যখন সে ওই মেয়েটিকে অটো থেকে নামতে দেখলো সে তার পড়ার পলিটিকাল সাইন্সে এর শেখা লেকচার ভুলে গেলো। সে শুধু ওই হাতের কথা মনে করতে থাকল যে হাত অটোর দিকে বাড়িয়ে টাকা দিয়েছে। আর অন্য যে হাতটি সেটিতে ছিল একটি বই। ছোট ছোট সরু আঙ্গুল যার একটিতে সোনার আংটি।
মিসির ওই মেয়েটির চেহারা দেখার চেষ্টা করলো কিন্ত নাকাব এতো মোটা ছিল তা সম্ভব হলো না। মেয়েটি জোরে জোরে হেঁটে মিসরের পাশের বাড়িটিতে ঢুকে পরলো। আর মিসির দাড়িয়ে কিছুক্ষন ভাবতে থাকলো যে কি করে আমি এতক্ষন ওই মেয়েটির জন্য ভাবছিলাম।

মিসির বাড়ি ঢুকে মাকে জিজ্ঞাসা করলো মা আমাদের পাশের বাড়িতে কে থাকে ওর নাম কি ? মা জিজ্ঞাসা করলো কেনো ? মিসির বললো না এমনিই জানতে চাইছি আগে তো দেখিনি! দেখিসনি মনে ওরা তো কদিনিই হলো পাশের বাড়িতে থাকেন। মিসির বললো কি করে কে ওই মেয়ে। মা বললো ওই মেয়েটির বাবা নেই মা সেও গত হয়েছেন। ওরা তিন বন আর এক ভাই। ভাই সবার থেকে বড়ো। আর ওদের ভাইয়েই হলো ওদের বাবা ওদের মা। খুব ভালো ছেলে ও বিয়েও এখনও করেনি। কারণ তিন বোনের দায়িত্ব তার উপর।


মিসিরের এই তিন বোনের কোনো কথাই তেই কোনো আবেগ দেখা গেলো না যে ওদের এক ভাইয়ের উপর বোঝা হয়ে আছে। সে শুধু ওই মেয়েটার ব্যাপারে জানতে চাই। যে অটো থেকে নেমে হাতে বই নিয়ে পাশের ওই বাড়িতে প্রবেশ করলো। এটা ঠিক যে ওই তিন বনের মধ্যে সে একজন। মিসির দুপুরের খাবার খেয়ে পাখার নিচে বিশ্রাম এ গেলো। গ্রীষ্ম কালে দুপুরের খাবার খেয়ে এক ঘন্টা বিশ্রাম তার চিরকালের অভ্যাস। কিন্তু এদিন দুপুরে তার চোখে ঘুম আসলোনা। সে শুধু ওই মেয়েটির কথা ভাবতে থাকলো যে তাদের পাশের বাড়িতে থাকে।

অনেক দিন অতিবাহিত হলো মিসির কোনো একই ভাবে মেয়েটির কথা ভাবতে থাকলো। কলেজ থেকে ফিরে ঘন্টার পর ঘন্টা ছাদে অপেক্ষা করতো। একটি বার দেখার জন্যে। কিন্তুু কোনোদিন তার দেখা মিলত না, মিসির মনে মনে দুঃখ পেতো, একটুতেই সে ইমোশন হয়ে পরত। মিসির ভাবলো এসব বেকার কোনো মানে হয়না এসবের। কিন্তুু ভালোবাসা প্রেম এসব আসলেই বেকার, মানুষ সব বুজেও সরে আসতে পারেনা ভালোবাসার পথ থেকে, জেনে বুঝেও ছুটে যেতে মন চায় ভালোবাসার পথে হাঁটতে। ভালোবাসার আগে এইসবের সাথে আগে পরিচিত হতে হয় যে পিছু হাটে সে হেরে যায়। মিসির মনে মনে ঠিক করলো যদি পাহাড়ও ভেঙ্গে পরে সে পিছু হাটবেন। সে ভালোবাসার পথে শক্ত পেট হেঁটে চলবে।

অনেক দিন পর মিসির সাইকেলে কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছে এমন সময় সে সামনে রিক্সা দেখলো যাতে বোরখা পরা একটি মেয়ে বসে আছে। মিসিরের আন্দাজ সত্যি হলো সে ওই মেয়েটিই।

কিছুক্ষন পর রিক্সা থামলো মেয়েটির এক হতে বই অন্য হাতদিয়ে রিক্সা চালকের দিকে টাকা বাড়িয়ে দিল। পরক্ষনেই চালক চেঁচিয়ে বললো কি ম্যাডাম জি। চলকটির কোথায় অস্থিরতা ছিল যা বাজে ভাবনার প্রকাশ হয়। মেয়েটি থমকে দাড়িয়ে পড়লো জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে। চালক রিক্সা থেকে নিচে নেমে এলো আর ৫ টাকা একটি কয়েন দেখিয়ে বললো এই ৫ টাকা দিলে চলবে না, বেশি লাগবে এটা আমার পারিশ্রমিক না। মেয়েটি গলা নিচু করে ধীর ভাষায় বললো আমি তো রোজই এই টাকা দিয়ে আসছি। চালক বললো আপনি যাকে এই ভাড়া দিয়ে আসেন হতেপারে আপনার সাথে কিছু সম্পর্ক আছে। কিন্তুু আমি পারবো না।

মিসির পাশেই দাড়িয়ে ছিল এই কথা শুনে সে নিজেকে স্থির রাখতে পারলো না। সে সাইকেল রাস্তায় রেখে চালকের দিকে এগিয়ে গেল আর এক ঘুসি বসিয়ে দিল চালকের মুখের উপর। এই ভাবে তিন চার বার সে প্রহার করলো চালক কে। আর ওই মেয়েকে বলল আপনি বাড়িতে প্রবেশ করুন আমি সব সামলে নেবো। বলে আবার সে চালক কে প্রহার করতে লাগলো। মিয়েটি কিছু বলতে চাইছিল মিসিরকে হয়তো ধন্যবাদের সহিত কিন্তু তা বলা হলনা। কথা মুখে এসেও কথায় যেন আটকে গেলো। সে চলে গেল বাড়ির ভিতর। মিসির পুরো ২০ মিনিট ধরে চালকের সঙ্গে বচসা করলো। মিসির খুব খুশি কারণ তার ভালোবাসার মানুষের কাছে তার বাহাদুরির পরিচয় প্রকাশ করেছে চালককে প্রহার করে।

মিসির এটাও লক্ষ্য করেছিল মেয়েটি বাড়িতে প্রবেশ করে জানালা দিয়ে তাকে দেখেছে। ওই ২০ মিনিট ধরে শেষে সে খুশী হয়ে আরও দুটো ঘুসি চালকের উপর চাপিয়ে দিল। এই ঘটনার পর মিসির পা থেকে মাথা প্রযন্ত পুরোটাই ওই বোরখা পড়া মেয়েটার প্রেমের প্রতি গ্রেফতার হয়ে যায়।

মিসির পরে জানতে পারে ওই মেয়েটির নাম রেহনুমা। তিন বোন বাবা মা নেই দাদার স্নেহে মানুষ। অল্প কিছু বিষয় সম্পত্তি রয়েছে। তবে এতে কোনো কিছু যাই আসেনা মিসিরের। সে তার ভালোবাসার নাম জেনে নিয়েছে এই তার কাছে সব। মিসির অনেক বার কলেজ এর রেলিং এ বসে তার নামে একাধিক ছিঠি লিখেছে। কিন্তু সব পরক্ষণে ছিরেও ফেলে। কিন্তুু একদিন সে একটা ছোট্ট চিরকুট লেখে আর মনে প্রতিজ্ঞা করে এই কাগজের টুকরো ঠিক তার মেহবুবার কাছে পৌঁছে দেবে।

এই চিঠি অনেক দিন সে পকেটে নিয়ে ঘুরতে থাকে। এভাবে অনেক দিন অতিবাহিত হয়। একদিন সে বাড়ি ফিরছে কলেজ থেকে আর সামনে রিক্সায় বোরখা র অন্তরালে বসা রেহনুমা কে দেখলো। রেহনুমা রিক্সা থেকে নেমে বাড়িতে প্রবেশ করবে এমন সময় মিসির তার সামনে এসে পকেট থেকে ওই কাগজের টুকরো সাহস করে বের করে আর কাপা গলায় বলে এটি আপনার সেদিন রিক্সায় থেকে গিয়েছিল। রেহনুমা হাত বাড়িয়ে সেই কাগজের টুকরো হতে নেয়। এবং গলার আওয়াজ নামিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেলো।

মিসির একটা দীর্ঘ শ্বাস নিল তার হৃৎপৃণ্ড ধক ধক করতে লাগলো। তার হৃৎস্পন্দন বারার কারণ হলো মিসির জানত না যে তার চিঠির উত্তর কি হবে। কিছু সময় পর রেহনুমা দের বাড়ির সামনে আর একটি রিক্সা থামলো এবং বোরখা পড়া আরেকটি মেয়ে নামলো। মিসির মনে মনে বললো এটা হতে পরে রেহনুমার ছোট বোন। মিসির এটা ভেবে খুশি যে সে চিঠি পৌঁছে দিতে পেরেছে তার গ্রন্তব্যে। সে তার দীর্ঘ দিনের ভাবনার অর্ধেক কাজ করে ফেলেছে।

এর দুদিন পর যখন সে কলেজ যাবে বলে রওনা দিল পথে এক ৬ বছর বয়সী একটা ছেলের হাত থেকে একটি চিঠি পেল। চিঠি পড়ে সে বুঝতে পারলো যে তার দীর্ঘ দিনের মনবাসনা পরিপূর্ণ হয়েছে। চিঠিতে লেখা ছিল প্রিয় মিসির আপনার ভালোবাসা পূর্ণ একটি চিরকুট পেয়েছি। যে যে কথা গুলো আপনি আমার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন আর তার উত্তর জানতে চেয়েছেন তার পরিপ্রক্ষিতে আমি আর কি বলবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। আমাকে আপনর প্রেমিকা মনে করে নিন।

এটুকু জানতে পেরেই মিসির আনন্দে আত্যহারা হয়ে পরলো। সেদিন কলেজে কোনো প্রীয়ড করতে তার ইচ্ছে হলনা। শুধু রেহনুমার কথা ভাবতে থাকলো আর কলেজের বাগানে ঘুরতে থাকলো সারাদিন। কিন্তুু সে মনে মনে অভিমান করলো রেহনুমার উপর, সে ভেবেছিল একটা বিশাল বড়ো আয়তনের চিঠি পাবে রেহনুমার কাছ থেকে আর তাও খুব তারা তারি।

এর পর আর তাদের দেখা হয়না। দুজনে দুজনের থেকে দূরে দূরে থাকলেও মনে হয় কাছেই আছে। আসলে ভালোবাসা মনে হয় আরকমেই একটা সময় আসে যখন দুটি মনের দুরাত্য কমে যেতে থাকে। কারণ তারা জেনে গাছে দুজন দুজনের মনের কথা। এখন তারা কথা বলে মনে মনে। দুজনে দুজনের মনের কথা শুনতে পায় মনে মনে কথা বলে। কিন্তু এভাবে আর কদিন বলবে তারা মনের কথা মনে মনে।

একদিন রেহনুমার চিঠি এলো মিশিরকে জানতে চেয়েছে , আচ্ছা আপনি আমাকে তো এখনও দেখেননি কারণ আমার মুখ নকাব দিয়ে ঢাকা থাকে। কি করে না দেখে আমাকে ভালো বাসলেন!? আমি শুনেছি চোখের মিলন না হলে নাকি ভালোবাসা তার পরিপূর্ণতা পায় না। উত্তরে মিসির চিঠিতে লেখে চোখের মিলনের চেয়ে মনের মিলন অনেক বেশি। আপনি কি তা জানেন! আর আমি যে আপনার সাথে আমার মনের মিলন ঘটাতে পেরেছি। আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছে নাই বা হলো চোখের মিলন। নাই বা আপনার চেহারা আমি দেখলাম। আর আপনি যেমনিই হন আমি আপনার মনকে ভালোবাসি আপনার চেহারা কে না।

এই চিঠি পেয়ে রেহনুমার চোখ জলে টলমল হয়ে উঠলো। সে ভাবলো একটা মেয়ের কাছে এর থেকে বড়ো আর কি পাওয়ার থাকতে পারে। সে মিসির কে চিঠিতে বললো আপনার মাকে আমার বাড়িতে কবে আসতে বলছেন তাহলে? মিসির বললো আর তো ১ বৎসর কলেজ কমপ্লিট হওয়ার সাথে সাথে আমিও আমার কাজ টি পেয়ে যাব। তার পর তুমি আমার আমি তোমার। আর আমাদের মজের এই অন্তরাল থাকবে না। এর দুবছর পর তারা বিয়ে করে এখন তারা সুখী দম্পতি।

⇒ গল্পটি আপনাদের ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার অনুরোধ রইলো। আপনাদের একটি কমেন্ট ও শেয়ার আমাদের প্রেরণা এবং আরও নতুন কিছু গল্প লেখার অনুপ্রেরণা জোগাতে সাহায্য করবে।

Comments are closed.

Scroll to Top