বর্তমানে এই সোশ্যাল মিডিয়ার প্রেক্ষাপটে দাড়িয়ে মনোবল বাড়ানোর নামে, ডিপ্রেশন দূর করার নামে কিছু ভিডিও এবং লেখা আপনাকে পৌঁছে দিচ্ছে এক ভয়ঙ্কর জগতে। আপনি হয়ে উঠছেন স্বার্থপর, আপনি হয়ে উঠছেন আরো একা। পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে আপনার মন-মানসিকতা। আর ধীরে ধীরে জীবনের রসদ হারিয়ে যাচ্ছে, বেচেঁ থাকার ইচ্ছা টুকুও চলে যাচ্ছে বহুদূরে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সব বিষয় গুলো থেকে সরে আসুন,
আজকাল দেখবেন, সোশাল নেটওয়ার্কে কিছু লেখা ভেসে উঠছে। কাউকে বিশ্বাস করবেন না, মন থেকে কাউকে ভালো বাসবেন না, একবার মন ভেঙে গেলে আর মন জোড়া লাগে না, ভালোবাসতে হলে নিজেকে ভালো বাসুন, কারো উপকার করবেন না, উপকার করার আগে ভেবে উপকার করুন, কারণ সবাই উপকারের দাম দেয় না’ ইত্যাদি…… ইত্যাদি।
আসলে যারা মোটিভেট করার নামে এই সব কথা গুলো সমাজে ছড়িয়ে দিচ্ছেন তারা কি ভেবে দেখেছেন, তাদের এই কিছু শব্দ মানুষের মনে কি প্রভাব ফেলতে পারে !
যখনি ডিপ্রেশনের মধ্যে থাকা কোনো ব্যাক্তি ফোনের স্ক্রিন স্ক্রল করতে করতে এই ধরনের ভিডিও দেখতে ও লেখা শুনতে পান, সে নতুন করে আবার একবার ডিপ্রেশনের মধ্যে ঢুকে পড়ে, এবং আবার একবার নিজেকে একা ভাবতে শুরু করে। সে সবার থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে চায়। এবং এরকম ভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে সেই ব্যক্তি গুরুতর মানসিক রোগীতে পরিণত হতে পারে। কারণ আঘাত পাওয়া, ঠকে যাওয়া, প্রতারিত হওয়া, ডিপ্রেশনে চলে যাওয়া মানুষ গুলো এই ধরনের ভিডিও ও লেখা গুলো খুব সহজে গ্রহণ করছে।
যদিও এগুলো গ্রহণ করে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না, ও তাদের ডিপ্রেশনও বিন্দুমাত্র কমছে না। উপরন্তু মন আরোও বিষিয়ে উঠছে, মানুষের প্রতি যতটুকু বিশ্বাস ছিল সব টুকু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মানুষ বাঁচতে ভুলে যাচ্ছে। আর তার ফলেই শরীরে বাসা বাঁধছে একটা দারুণ রোগ, যার নাম একাকিত্ব, যা কখনোই সেরে উঠবে না।
ডিপ্রেশনের কোনো ওষুধ নেই। আপনি যদি ভাবেন আপনার ডিপ্রেশন কেউ সারিয়ে দিতে পারবে, তবে জানবেন আপনার এই ভাবনা একশো শতাংশ ভুল।
ডিপ্রেসন এমন এক অসুখ, আপনি যদি নিজে সারিয়ে নিতে পারেন, তবেই সারবে, পৃথিবীর কেউই আপনার এই ডিপ্রেসন একাকীত্ব নামক ব্যাধিকে দুর করতে পারবে না। কারণ একটা কথা সবসময় খেয়াল রাখতে হবে “মনের ঘরে কারোর হাত নেই”।
তাই পজেটিভ চিন্তা করুন। পজেটিভ লেখা পড়ুন। যা পড়লে বা যা শুনলে মনে বিশ্বাস জন্মাবে, এরকম বিষয় গুলো রপ্ত করুন।
কার সাথে কবে কোথায় কি একটা খারাপ ঘটনা ঘটেছে, তার উপর ভিত্তি করে নিজেকে কখনোই তর সাথে মিলিয়ে ফেলা উচিত নয়।
ভালো মানুষ পৃথিবীতে অনেক কম, এরকম ভাবা মানে নিজেকে বোকা ভাবা ছাড়া আর কিছুই নয়।
জেনে রাখবেন দু একটা কাঁকড় চালে মিশে থাকতেই পারে, তার ফলে সব চাল গুলো কখনোই কাঁকড় হয়ে যাবে না।
মানুষ হয়ে জন্মেছি যখন ঠকব না, প্রতারিত হব না, কষ্ট পাবন এমনটা আবার হয় নাকি? ঠকে যাওয়া, হেরে যাওয়া, হারিয়ে ফেলা, ব্যথা পাওয়া এগুলো হলো জীবিত মানুষের জীবনের একটা অধ্যায় মাত্র, আমরা যদি আমাদের মানবিক দিক গুলোর সঠিক ও সদব্যবহার করতে না পারি তবে মানুষ হলাম কেন?
তাই এখনি সতর্ক হন। নিজের ভালোর জন্য এই সব নেগেটিভ লেখা, নেগেটিভ ভিডিও থেকে দুরে থাকুন। ডিপ্রেশন, একাকিত্বকে কাছে ঘেঁষতে দেবেন না। বিশ্বাস নিয়ে বাঁচুন। এই তো ক’দিনের জীবন, আনন্দ করে বাঁচুন। অবিশ্বাসের পৃথিবী নিজেকে উপহার না দিয়ে একে অপরকে ভালোবেসে! আসুন ভালোবাসাময় এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি।